January 8, 2025, 4:31 am
মোঃতরিকুল ইসলাম তরুন, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার সবচেয়ে বড় বড়ই বাগান মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল। বিদেশ ফেরত ইউনুছ ভূঁইয়া গড়েছেন এই বাগান। তিন বছরে বিক্রি করেছেন অর্ধ কোটি টাকার বড়ই। ইউনুছ ভূঁইয়া চৌদ্দ বছর সৌদি প্রবাস জীবন শেষে দেশে আসেন ২০২০ সালে। করোনার বেকার সময়কে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেন সফল উদ্যোক্তা। নীজের ১০ বিঘা জমির সাথে আরো ৫০ বিঘা পতিত জমি লিজ নেন তিনি। পুরো জায়গা জুড়ে মাছের প্রজেক্ট করে মাছ চাষ করেন। নানা প্রতিকুলতায় মাছের ব্যবসায় লোসান হয় তাকে।
তাতে ভেঙে যাননি তিনি। সফল হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাছের প্রজেক্টকে ফলের বাগান বানানো কাজ শুরু করেন। তার এই কাজ দেখে মানুষ উপহাস ও ঠাট্রা -বিদ্রুপ করতে থাকেন। কারণ মাছের প্রজেক্টের ভীতর কিভাবে ফলবাগান হয় ? পানিতে সব গাছ ডুবে মরে যাবে। কেউ কেউ তাকে পাগলও বলেন। লোকের কথায় কান না দিয়ে তিনি তার কাজ করতে থাকেন। বিশ্বাস ছিল সফল হবেন। ইউটিউব ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় মাছের প্রজেক্টের ভীতর লাগিয়েছেন ৩ হাজার বড়ই, ৭ হাজার লেবু, ৮শ কলা গাছ, মাল্টাসহ নানা জাতের সাথী ফসল ফলিয়ে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেন । এই মূহর্তে তার বাগানে বড়ইয়ের চমৎকার ফলন রয়েছে। গাছের পাতায় পাতায় বড়ই দোলছে। বল সুন্দরী জাতের বড়ই দেখতে খুবই সুন্দর। খেতে মিষ্টি- অধিক রসালো ও পুষ্টিগুনে ভরপুর। তিন হাজার বড়ই গাছ থেকে ৩ বছরে বিক্রি করেছন প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বেশি বড়ই।
কৃষক ইউনুছ ভূইয়া বলেন, আমি বিদেশে ছিলাম। সেখানে কৃষি খামারের তত্ত¡াবধানে কাজ করেছি। দেশে এসে কোভিডের কারনে আর বিদেশ যেতে পারি নাই। বেকার হয়ে পড়ছিলাম। অনেক ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেই যে আর অন্যের অধীনে চাকুরী করবো না। এবার উদ্যেক্তা হয়ে নীজেই কিছু একটা করব। যেই ভাবা সেই কাজ। তাই আমার পরিত্যাক্ত ১০ বিঘা জমির সাথে আরো ৫০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে একটি মাছের প্রজেক্ট তৈরি করি। দুই বছর পর আরো ৫ বিঘা জমি ক্রয় করেছি।
মাছের ব্যবসা ভালো না হওয়ায় প্রজেক্টের ভীতর বড়ই ও লেবুর বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। মাছের প্রজেক্টের মত নীচু জায়গায় ফলবাগান করছি দেখে এলাকার মানুষ আমাকে পাগল বলছে। সমালোচকদের কথায় কান না দিয়ে নাটোর থেকে আড়াই মাস বয়সী বড়ই ও লেবুর চারা এনে রোপন করি । চারা রোপনের ৩ মাস পর বাগানের প্রতিটা গাছে বড়ই আসে। প্রথম বছর প্রায় দেড় লাখ টাকার বড়ই বিক্রি করেছি। পরের বছর ৩০ লাখ, এবছর ঘুর্ণিজড় সিতরাংয়ের কারণে কম হলেও আশা করছি ২৫ লাখ টাকার বড়ই বিক্রি হবে।
একটি গাছে ৩০ থেকে ৪০ কেজি বড়ই আসে । পাইকারদের কাছে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। বাগানে প্রতিদিন ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। এছাড়াও বাগান নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষনিক দুইজন লোক নিয়োজিত আছে। আমার বিশ্বাস ছিল সফল হবো এবং হয়েছি।
মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেন, কুমিল্লার সবচেয়ে বড়-বড়ই বাগান কাজিয়াতল । আমি ও উপসহকারী কর্মকতারা রীতিমত এই কৃষি প্রজেক্টটি দেখাশোনা করছি। কৃষক ইউনুছ ভূইয়ার মত যারা উদ্যোক্তা হয়ে পরিত্যাক্ত জমিতে বাগান ও কৃষি কাজ করতে চায় আমরা তাদের সর্বাত্তক সহযোগীতা দিয়ে পাশে থাকবো।